প্রতিটি কাজেরই একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। নিয়মমতো কাজ করলে সুফল পাওয়া যায়। নামায একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নামায মহানবি (স.) প্রদর্শিত পন্থায় আদায় করা অত্যন্ত জরুরি। এ প্রসঙ্গে মহানবি (স.) বলেন, 'তোমরা নামায আদায় কর যেমনিভাবে আমাকে আদায় করতে দেখেছ।' (বুখারি)
কোনো প্রকার ভুল হলে নামাযের ক্ষতি হয়। এতে বান্দার গুনাহ হয়। বিনীত ও একাগ্রচিত্তে সালাত আদায় করতে হয়। লোকদেখানো কিংবা উদাসীনভাবে আদায়কৃত সালাত আল্লাহ কবুল করেন না।
আল্লাহ বলেন-
"সুতরাং দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের জন্য যারা তাদের সালাত সম্মন্ধে উদাসীন, যারা লোকদেখানোর জন্য ওটা (সালাত) আদায় করে।" (সূরা আল-মাউন, আয়াত: ৪-৬)
নামায আদায়কালে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে, নামাযের শর্তগুলোর কোনোটাই যেন বাদ না পড়ে। পবিত্র হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। মনে করতে হবে যে, আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি আমাকে দেখছেন।
দুই, তিন ও চার রাকআত বিশিষ্ট নামায আদায়ের নিয়মে কিছুটা তারতম্য আছে। নিচে এর বিবরণ দেওয়া হলো:
দুই রাকআত বিশিষ্ট সালাত আদায়ের নিয়ম
কিবলামুখী হয়ে নিয়ত করে দুই হাত কানের লতি পর্যন্ত তুলে 'আল্লাহু আকবার' বলে নাভির নিচে হাত বাঁধব। তবে নারীগণ হাত তুলবে কাঁধ পর্যন্ত এবং বাম হাতের পিঠের ওপর ডান হাত রেখে বুকের উপর হাত বাধবে। নিয়ত মনে মনে করলেই চলবে। তবে মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। এরপর 'সানা' পড়ব। এরপর 'আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম, বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম' বলে সূরা ফাতিহা পড়ব। ফাতিহা পড়ে মনে মনে 'আমিন' বলব। এরপর অন্য কোনো সূরার কমপক্ষে বড় এক আয়াত অথবা ছোট তিন আয়াত কিংবা একটি সূরা পড়ব। তারপর 'আল্লাহু আকবার' বলে রুকু করব। রুকুতে কমপক্ষে তিনবার 'সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম' বলব। তারপর 'সামি আল্লাহুলিমান হামিদাহ্' বলে সোজা হয়ে দাঁড়াব। দাঁড়ানো অবস্থায় 'রাব্বানা লাকাল হাম্দ' বলব। তারপর 'আল্লাহু আকবার' বলে সিজদাহ্ করব। সিজদায় অন্তত তিনবার 'সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা' বলব। তারপর 'আল্লাহু আকবার' বলে সোজা হয়ে বসব। আবার 'আল্লাহু আকবার' বলে দ্বিতীয় সিজদাহ করব। এবারও সিজদায় কমপক্ষে তিনবার 'সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা' বলব। এরপর 'আল্লাহু আকবার' বলে সোজা হয়ে দাঁড়াব। এভাবে প্রথম রাকআত শেষ হবে। এখন দ্বিতীয় রাকআত শুরু হলো। 'বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম' বলে সূরা ফাতিহা পড়ব। তারপর পূর্বের মতো সূরা মিলাব। তারপর প্রথম রাকআতের মতো রুকু ও সিজদাহ্ করে সোজা হয়ে বসব। তাশাহ্হুদ, দরুন্দ ও দোয়া মাসূরা পড়ে ডানে ও বামে মুখ ফিরিয়ে 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ' বলব। এইভাবে দুই রাকআত বিশিষ্ট নামায শেষ হবে।
তিন রাকআত বিশিষ্ট সালাত আদায়ের নিয়ম
তিন রাকআত বিশিষ্ট ফরজ নামাযে দ্বিতীয় রাকআতের পর বসা অবস্থায় শুধু তাশাহহুদ পড়ব। তারপর তাকবির বলে সোজা হয়ে দাঁড়াব। এরপর বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ব। অন্য কোনো সূরা পড়ব না। এরপর পূর্বের মতো রুকু, সিজদাহ করব। সিজদাহ পর সোজা হয়ে বসে তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসূরা পড়ে ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করব।
চার রাকআত বিশিষ্ট সালাত আদায়ের নিয়ম
চার রাকআত বিশিষ্ট ফরজ নামাযে দ্বিতীয় রাকআতের পর বসা অবস্থায় শুধু তাশাহহুদ পড়ব। পরে তৃতীয় রাকআতের জন্য তাকবির বলে উঠে দাঁড়াব। এরপর বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ব। তারপর রুকু-সিজদাহ করে, চতুর্থ রাকআতের জন্য উঠে দাঁড়াব। চতুর্থ রাকআতে তৃতীয় রাকআতের মতো সূরা ফাতিহা পড়ে রুকু, সিজদাহ করার পর বসে তাশাহহুদ, দরুন্দ ও দোয়া মাসূরা পড়ে ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করব। ওয়াজিব, সুন্নত বা নফল নামায হলে তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকআতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়ব।
| কাজ: শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই উপকরণের মাধ্যমে নামায আদায়ের নিয়ম শ্রেণিতে অনুশীলন করবে। শিক্ষক মহোদয় সহযোগিতা করবেন। | 
Read more